স্বাস্থ্য কি?: প্রথমেই জানা যাক, স্বাস্থ্য বলতে কী বুঝায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১০টি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। এই মানদণ্ডের ভিত্তিতেই বোঝা যাবে, ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যের ভালো-মন্দ। মানদণ্ডগুলি হলো—এক. কর্মশক্তি-সম্পন্ন, স্বাভাবিকভাবে জীবনের বিভিন্ন কাজ মোকাবেলা করতে পারা। দুই. আশাবাদী, সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে পারা । তিন. ব্যক্তি নিয়মিত বিশ্রাম নেয়, ঘুম ভালো হয়। চার. পরিবেশের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে, বিভিন্ন অবস্থার মোকাবেলা করতে পারে। পাঁচ. সাধারণ সর্দি ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধক শক্তি আছে। ছয়. ওজন সঠিক, শরীরের সংগঠনিক দিক সঠিক। সাত. চোখ উজ্জ্বল, কোনো প্রদাহ রোগ নেই। আট. দাঁত পরিষ্কার ও সতেজ, ব্যাথা নেই, দাঁতের মাঢ়ির রং স্বাভাবিক। নয়. চুলে উজ্জ্বলতা আছে, খুশকি নেই। দশ. হাড় স্বাস্থ্যবান, পেশি ও ত্বক নমনীয়, হাঁটাহাঁটি করলে কোনো অসুবিধা নেই।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে ইসলামিক মৌলিক বক্তব্য : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আমাদের সকল কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্যই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা। ১৪০০ বছর আগ থেকেই ইসলাম আমাদেরকে প্রতিটি পদে পদে দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। আল্লাহ পাক বলেন— তোমাদের জন্য মুহাম্মদ (সা.) -এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তোমরা সেই শান্তির নিকেতন কে অনুস্মরণ কর! [সূরা আহযাব, আয়াত ২১]
রাসূল (সা.) বলেছেন— স্বচ্ছলতা ও স্বাস্থ্য এ দুটি মহাদানের মূল্য প্রায় লোকই হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না । [বুখারি]
সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কী দরকার? নি:সেন্দহে সঠিক আহার-পানীয় এবং পর্যাপ্ত নিন্দ্রা আর পরিশ্রম।
আহার : আহারের ক্ষেত্রে প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হালাল খাবার। কোরআনে এসেছে— আল্লাহ তা’য়ালা যেসব বস্তু তোমাদেরকে দিয়েছেন, তন্মধ্য থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু খাও এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী। [সূরা মায়িদা, আয়াত ৪৪]
অন্য আয়াতে এসেছে— অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তারই এবাদতকারী হয়ে থাক। [সূরা নাহল, আয়াত ১১৪]
রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন— তোমরা উদর পূর্তি করে ভোজন করো না, কেননা, এতে তোমাদের অন্তরে আল্লাহ পাকের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। [মুসলিম]
অতিভোজন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, অতিভোজনের ফলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, ইত্যাদি হতে পারে। হারাম খ্যদের ইসলামে রয়েছে শুকরের গোশত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শুকরের গোশত মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাস করে এবং শরীরের ক্যান্সারের জীবাণু ঢুকিয়ে দেয় । ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে, যখন ক্ষুধা পাবে কেবল তখনই খাদ্য গ্রহণ করবে । চিকিৎবিজ্ঞানের ভাষায়, ক্ষুধার সময়েও আহারই একমাত্র শরীরের জন্যে উপযোগী। [মানবব্যধি ও চিকিৎসা, ডা. হায়াত রসূল খান]
রাসূলের (সা.) আহার : পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে—‘বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১)
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাত অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। অতিভোজন তিনি পছন্দ করতেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন— আমরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা খাওয়ার প্রয়োজন ব্যতীত খাদ্য গ্রহণ করি না। আর যখনই আমরা খাদ্য গ্রহণ করি তৃপ্তির সঙ্গে (উদরপূর্তি করে) ভক্ষণ করি না। নবী করীম (সা.) পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাবার দিয়ে এবং এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলেছেন। বাকি এক-তৃতীয়াংশ খালি রাখতে বলেছেন। [ইবনে মাজাহ]
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে— তোমরা ডান হাতে ভক্ষণ কর।’ [মুসলিম]
নবী করীম (সা.) দুধ ও মাছ একত্রে খেতে নিষেধ করেছেন, কেননা এর দ্বারা ক্ষতি সাধনের যথেষ্ট আশংকা রয়েছে। [যাদুল মায়াদ]
পানীয় : বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসলিম শরিফে ছয়টির বেশি সহিহ হাদিস আছে যেখানে মুসলমানদেরকে দাড়িয়ে পান করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম, ৫০১৭]
অন্য হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) কোনো ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম, ৫০১২]
আরেটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— নবী করীম (সা.) দাঁড়িয়ে পান করা সতর্ক করে দিয়েছেন। [মুসলিম, ৫০২০]
এক হাদিসে স্পষ্ট আছে— কেউ দাঁড়িয়ে পান করবে না। [মুসলিম, ৫০২২]
বোঝা যায়, এ সকল হাদিস দাড়িয়ে পান করাকে অনুমোদন দিচ্ছে না।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে পান করার কুফল বর্ণনা করেছে। আজকাল অনেক সময় ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি যেচেই জিজ্ঞেস করেন যে, দাঁড়িয়ে পনা করার অভ্যাস আছে কি না। কেননা, দাঁড়িয়ে পান করার ফলে কমপক্ষে শরীর তিনটি ক্ষতির সম্মুখীন হয় ।
এক. পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত (stomach damage) হয়। যার ফলে রুচি কমে যায় এবং মানুষ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজের অ্যানার্জি থাকে না।
দুই. স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত (vagal inhibition) হয়। যার ফলে মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
তিন. কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একে ইংরেজিতে বলে— due to unequal distribution of water to whole kidney of both side। এর ফলে প্রস্রাবে অস্বাভাবিক দুর্গন্ধ হয়। এমনকি মেয়েদের জরায়ু গর্ভক্ষমতা হারায়। [স্ট্রং বডি, ডা. কলিন ক্যাস্টল]
তাছাড়া হাদিসে আছে— রাসূলুল্লাহ (সা.) পানির মধ্যে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং তার মধ্যে ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম]
এ ক্ষেত্রে বর্তমান বিজ্ঞানীরা তাদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল হিসেবে যা বর্ণনা করেছেন, তা প্রিয়নবী (সা)-এর উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা মাত্র। পানি বিশেষজ্ঞ বা পানি বিজ্ঞানীদের মতে প্রাণীর নিঃশ্বাস ও ফুঁকের সাথে কার্বনডাই অক্সাইড বের হয় আর এ কার্বনডাই অক্সাইড যখন পানির সাথে গিয়ে মিশ্রিত হয় তখন তা থেকে কার্বলিক এসিড তৈরী হয়। [লিভারিক অ্যনাটমি, কিং রুপার্ড স্টিফেন]
আজ থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর পূর্বে নবীজী (সা.) -এর এ জাতীয় রাসায়নিক তথ্যাদি আজকের রসায়নদিবদেরকেও হতভম্ব করে। এ প্রসঙ্গে ডান হাতে পানি পান করা এবং থেমে থেমে পানি পান করার বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। কেননা সকল কাজ ডান দিক থেকে করা সুন্নাত। ###